
প্রকাশিত: Wed, Feb 21, 2024 3:04 PM আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 10:23 AM
কেমন করে ভাষা নিজেই মা?
অধ্যাপক যতীন সরকার: মাতৃভাষাকে সাধারণভাবে বলা হয় যে, মায়ের ভাষা। আসলে বলা তা ঠিক নয়। কারণ ভাষা নিজেই মা। কেমন করে? ধরুন আমি জন্ম নিলাম বাঙালি মায়ের ঘরে। আমার মায়ের ভাষা বাংলা, স্বাভাবিকভাবেই আমার ভাষাও বাংলা। কিন্তু আমার জন্মের পর যদি অন্য কোনো দেশে ধরে নিয়ে যেতো, সেখানে আমি মানুষ হতাম, সেখানে আমার ভাষা কী হতো? নিশ্চয়ই আমার ভাষা বাংলা হতো না। যে দেশে নিয়ে যাওয়া হতো, সেখানের ভাষাই আমার ভাষা হতো। কিন্তু আমার মায়ের ভাষা তো বাংলা। কিন্তু আমি তখন বলতাম, আমার ভাষা ওমুক, আর আমার মাতৃভাষা বাংলা। কাজেই পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবেÑমাতৃভাষার গর্বে জন্মগ্রহণ করেই মানুষ মানুষ হয়। অন্যান্য প্রাণীও যেভাবে জন্মগ্রহণ করে মায়ের পেটে, মায়ের গর্বে কিন্তু অন্যান্য প্রাণী-পশু জন্ম থেকেই পশু। মানুষ জন্ম থেকেই মানুষ হয় না।
পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্রের নাগরিক আমরা হয়ে গিয়েছিলাম। এখন সেই পাকিস্তান ভাঙলো কে? পাকিস্তানের তথাকথিত জাতির জনক যেদিন বলেছিলেন, উর্দুই, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, সেদিনই পাকিস্তান ভাঙার সূচনা হলো। কারণ তার এই ঘোষণা আমাদের বুকের ভেতরে আঘাত হেনেছিলো। আমরা যদি নিজের মায়ের ভাষায় আমাদের চেতনা জাগ্রত রাখতে না পারি, প্রকাশ করতে না পারি, তাহলে আমার এ জীবন বৃথা। ফলে এই বৃথা জীবনের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা ভাষা আন্দোলন করেছিলাম। সেই ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের চিনেছিলাম এবং একপর্যায়ে একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক আন্দোলন হলো। তারপর সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এইÑস্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেও মাতৃভাষার মর্যাদা আমরা যথাযথ প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। যদিও সংবিধানে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে যে, আমাদের মাতৃভাষা বাংলা, সেটাই আমাদের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু রাষ্ট্রের সমস্ত কাজকর্ম যেভাবে মাতৃভাষায় চলা উচিত, সেটি হচ্ছে না।
এখন কিছু কিছু মানুষ যারা টাকাপয়সার মালিক হয়ে গেছেন অধিক পরিমাণে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের বাংলা স্কুলে না পড়িয়ে ইংরেজি প্রতিষ্ঠানে পড়ান। আমাদের এখানে নানান রকমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম, মাদরাসাÑএই যে এভাবে আমাদের বিভাজিত করা হয়েছে, এতে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা হয় না। আমাদের জাতির মর্যাদাও রক্ষা হয় না। ফলে প্রকৃতপক্ষে আমাদের মাতৃভাষাকে যথার্থ অর্থে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত না করলে ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবো না। ভাষা আন্দোলনের যথার্থ মর্যাদাও রক্ষা করতে পারবো না। বাংলাদেশেরও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবো না। বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষা করতে হলে আমাদের মাতৃভাষার যথাযথ মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটা এ কারণেই তখন গুরুত্বপূণ হয়ে উঠে যে, মাতৃভাষা ছাড়া যদি রাষ্ট্রভাষা হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্র সেই মাতৃভাষার যে সন্তান তাদের সেই রাষ্ট্র হয় না। সেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো। সেটা যদি পরিষ্কার করার জন্য মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ সেদিন এভাবে কথা না বলতেন, তাহলে মাতৃভাষা আন্দোলন হতো না। একটা লেখা আমি লিখেছিলাম, ‘ জিন্নাহ্র প্রতি আমি কৃতজ্ঞ’। কারণ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ প্রকৃতভাবে চিনতে সাহায্য করেছিলেন তার এই কথার মধ্য দিয়ে। আমাদের যে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র, তা আমাদের রাষ্ট্র থাকবে না। কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাষা আমার মাতৃভাষা নয়।
১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ বললেন, উর্দুই, একমাত্রই উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, সেদিনই স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়ে গিয়েছিলো। সেই বীজই বংশবৃদ্ধি করে বড় হয়ে উঠে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনই আমাদের স্বাধীনতাকে লালন-পালন করে। তারপর বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলি। পরিচিতি : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
